দীঘিনালার মাণিক্য দীঘি
ত্রিপুরা মহারাজা গােবিন্দ মাণিক্য তাঁর সৎ ভাই নক্ষত্র নারায়ণের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেছিলেন। তখন তিনি ভ্রাতিঘাতি যুদ্ধ ও কলংক থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য নক্ষত্রকে ডেকে পাঠিয়ে বলেছিলেন, “ভাই, তুমি যখন সিংহাসনে বসতে চাও, তখন আর বাংলার নবাবের সাহায্য নেবার প্রয়ােজন কি? আমাদের পূর্ব পুরুষগণ ত্রিপুরা জাতি ও ত্রিপুরা রাজ্যের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে ভারত উপমহাদেশে মাথা উঁচু করে বিজয় নিশান উড়িয়ে গিয়েছিলেন। ত্রিপুরা জাতির যশ ও খ্যাতি তুমি নষ্ট করাে না। আমি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়ে তােমাকে ত্রিপুরা রাজ্যের সােনার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করবাে। তােমার কোন ভয় নেই। তুমি ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করাে এবং প্রজাগণকে আপন সন্তানের ন্যায় পালন করাে।
ত্রিপুরা মহারাজা গােবিন্দ মাণিক্য সৎভাই নক্ষত্র নারায়ণের হাতে ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনভার অর্পন করে প্রথমে ত্রিপুরা রাজ্যাংশ বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা অঞ্চলে এসে বসবাস করেছিলেন। তথায় মায়িনী নদীর তীরে একটি মনােরম আশ্রম নির্মাণ করে নির্বাসন জীবন যাপন করতে লাগলেন। তখন দীঘিনালা অঞ্চলটি ছিল ত্রিপুরা জাতির একটি গােত্র রিয়াংদের আবাস ভূমি। রাজ অনুগত রিয়াংগণ যখন জানতে পারলেন যে, মহারাজা গােবিন্দ মাণিক্য এই অঞ্চলে নির্বাসনে এসেছেন, তখন তাঁরা দলে দলে মহারাজার সকাশে উপনীত হয়ে নক্ষত্র নারায়ণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার কথা ব্যক্ত করলে, গােবিন্দ মাণিক্য রিয়াং প্রজাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, নক্ষত্র নারায়ণ আমার ভাই। আমি স্বেচ্ছায় তাঁর হাতে ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনভার অর্পন করে নির্বাসনে এসেছি। তােমরা নক্ষত্র নারায়ণকে তােমাদের প্রতিপালক জেনাে এবং তাঁর আনুগত্য স্বীকার করো। তখন রিয়াংগণ ত্রিপুরা মহারাজা গােবিন্দ মাণিক্যের আদেশে ছােট বড় মিলে ১২টি দীঘি খনন করেছিলেন। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য খনিত দীঘিগুলির পাশে নালাও খনিত হয়েছিল। তখন থেকে উক্ত অঞ্চলের নামকরণ হয়েছিল দীঘিনালা।
রাজমালা গ্রন্থ সুত্র থেকে জানা যায় যে, ত্রিপুরা মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাসনে এসেছিলেন। এবং দীঘিনালার দীঘিগুলোও উক্ত সময়ে খনিত হয়েছিল। ত্রিপুরা মহারাজার নামানুসারে দীঘিগুলির নামও “মাণিক্য দীঘি” নাম খ্যাতি লাভ করে। কালের পরিক্রমায় খনিত দীঘিগুলির অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। মাত্র তিনটি দীঘি বিদ্যমান থেকে ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি বহন করে চলেছে।।