তোর অনেক বয়স হয়েছে বিয়ে কর


মকল রোজ বলে ছেলে সাল তোর অনেক বয়স হয়েছে ; একটা বিয়ে সাদি কর! তুমিও একটু দুষ্টুমি করে দেখ না কোনো মেয়ের লগে?  মেয়ে পটাতে হয় ছলে, কৌশলে, মজা-দুষ্টুমি করে। বুড়ো হলে তোর সুন্দর মুখটা পীড়া মুরগির মতো শুকনা শুকনা দেখাবে। আমায় অন্তত নাতির মুখটা তো দেখতে দিবি পুত্র। উহঃ ! বাবা রোজ একখান কথা শুনি বিয়ে কর , বিয়ে কর? এসব কথা ছাড়া আপনার আর কোন কথা আছে কি? এ কম বয়সে কেউ কি বিয়ে করে? মা বলতো আমার সুন্দর দাঁড়ি গোঁফ যতদিন না পাকা পাকা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বিয়ে না করি। বুঝেছ!  তবুও আপনি বারবার বলে থাকো  আমাকে বিয়ে করতে! বাবা তোর রোজ জ্বালাতন আর সহ্য হচ্ছে না ! ঠিক আছে । চেষ্টা করছি । আজই আমি মেয়ে পটাবো।ঐ তো  জমিদার অকূলের মেয়ে নাগটি ঘাটে গোসল করতে আসছে । হ‍্যাঁ। এটাই তো ঠিক সময় মেয়ে পটানোর । বাবা রোজ বলে মেয়ের দুষ্টুমি করে পটিয়ে ফেলতে। এটা হাতছানি করা যাবে না। এই মেয়ে মিস,মানে বৌ মিস।একটা টুকরো পাথর নিই। এই ঝোঁপে লুকিয়ে থেকে ঘাটে পৌঁছলে  কাজ শুরু করতে হবে। আহা ! কি রূপসী কন‍্যা ময়ূরের মত নেচে নেচে আসছে । পাথর ঢিল  মার ,দে , সাল ।  ইয়া। আরে কি অদ্ভুত ! মজা করে পাথর ঢিল মারলাম আর মেয়েটি ভূতের মতো দাঁত বের করে হা করে রইলো। যায় হোক । গিয়ে দেখি, চুপচাপ কেন?  নড়েও না ! হায় রে হায় ! এ কি করলাম । বাবাকে তো দেখি বড়ই মিথ্যেবাদী। ছলে, কৌশলে, মজা-দুষ্টুমি করে নাকি মেয়ে পটানো যায় । আর এদিকে আমার প্রথম দুষ্টুমি করাতেই নাগটি মরে গেল। মরে যাওয়া মানে কি বিয়ে? যায় বাবাকে খবরটা দিতেই হবে । বলিস কি? আরে ছাগল ছেলে আমার । তোমাকে বলেছি মেয়েদের প্রেমে ফেলার কৌশল । পাথর ঢিল মারলে কি প্রেম হয়ে যায় গাদা । পাথর মারলে তো সে মরে যাবে । আর তুমি প্রেম করতে গিয়ে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলেছিস নাগটিকে।    তুমিই তো আমার সত্যি বুদ্ধিমান বেতা। শোন সাল আমার! আমি জমিদার সাহেবের মৃত মেয়ে নাগটিকে গায়ে বড় একটি পাথরে হাত-পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দিয়ে আসছি। তুমি বাড়ি থেকে কোথাও বের হবে না বুঝেছ । চলি । আহা! ভোর সকালে নাক ডেকে ঘুমোতে কি যে আরাম ! যাক, এবার ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করি । অন্তত কিছু তো ব‍্যায়াম হবে । এই শোন! সাল। বলেন । এদিকে কোথাও কি আমাদের জমিদার অকূলের মেয়ে নাগটিকে দেখেছেন? তোরা কারা ? আমরা জমিদার সাহেবের প্রহরী । হাহাহা, ওহ আচ্ছা! নাগটিকে তো আমি পাথর ঢিল ছুড়ে মেরে ফেলেছিলাম আর বাবা মরা মেয়েটিকে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল । তোরা বাপ ছেলে আমাদের জমিদার সাহেবের মেয়েকে মেরে ফেলেছিস । হ‍্যাঁ । মারতে চায় নি তো!  আমার  প্রেমে  ফেলবো বলে দুষ্টুমি করে পাথর মেরেছিলাম অমনি মরে গেল। কি বলছো কি তুমি ? কোন পুকুরে ফেলেছিস! চলতো দেখি? হায়রে আমার কুলাঙ্গার ছেলে। সবকিছু বলে দিলেন কেন? ঠোঁটকাটা বোকা ছেলে । নিজে নিজেই ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন তাই না! একটা ছাগল মেরে পুকুরে ফেলতে হবে। যাই, তারা পুকুরে পৌঁছার আগেই নাগটিকে তুলে ছাগলকে পুকুরে ফেলতে হবে ।  প্রহরী , এই তো সেই পুকুর । সাল , যাও। কোথায় রেখেছ তোমরা পুকুর থেকে নাগটিকে নিয়ে এসো ।  ঠিক আছে । যাচ্ছি । পুকুরের গভীরতাও বেশি তাই ডুব দিতে হবে । চোখ খুলে ডুব দেবো নাকি মুখ খুলে ডুব দেবো । ডুবেই দেখি! এই যে প্রহরীরা , নাগটির দুটো শিং আছে নাকি? ওর আবার শিং থাকবে কেন? ভালো করে দেখ। আবারও দেখতে হবে! আচ্ছা নাগটির কি চারটি পা , দাঁড়ি, দুটো  কান , বিচি  আছে নাকি? মূর্খ , নাগটির  ওসব থাকবে কেন? যে থাকুন না কেন তুমি নাগটিকে নিয়ে এসো। কি ওজন বাপ রে বাপ । এই নে নাগরিকে । হারামজাদা, তুই ছাগলকে নাগটি বলেছিস । তোর এত্তো বড় সাহস! আমাদের সাথে অনেক মজা নিয়েছিস তাই না ! এবার তোকে আমরা নতুন মজার খেলা দেখাবো । এই তোরা হা করে দাঁড়িয়ে দেখছিস তা কি? লাইফাং , বফাং  তোরা গর্ত খুঁড়তে থাক। গর্তের কাজ শেষ , কথৌক বস। এই অবুঝ , মিথ্যেবাদী সালকে ধরে হাত-পা বেঁধে গর্তে ফেলে দাও । মাথাটা যেন বাইরে থাকে । হারামির বাচ্চা, গর্তে থেকে এবার মজা করো । চলো! জমিদার সাহেবের হুকুম যেভাবেই হোক আজকের মধ্যে কুমারী নাগটিকে খুঁজে বের করতে হবে । আচ্ছা ! নাগটি গেল কোথায়? আর ঐ ছাগলটা পুকুরে এলো কি করে? মাগো, এখন এই গর্ত থেকে বের হবো কি করে? যাক। একটা উপায় বের করতে হবে। আরে! ইনি কে? নিশ্চয় কোনো জমিদারি পুত্র হবে । এটাই সঠিক সময় । আমি নাগটিকে বিয়ে করবো না, নাগটিকে বিয়ে করবো না । নাগটিকে বিয়ে করতে অনিচ্ছুক বললে আবার বিয়ে করতে বাধ্য করে। কি? কোন মেয়ে? ভাই। নাগটিকে । তুমি কে ! ভাই । আমি হর । ওহ আচ্ছা!  আমি হচ্ছে সাল । আমার কি অপরাধ ছিল ? হর ভাই । অকূল জমিদারের মেয়ে নাগটিকে বিয়ে করিনি বলে শাস্তি হিসেবে জমিদার  আমাকে গর্তে ফেলে দিয়েছে । আমাকে রক্ষা করো , হর ভাই। আরে ! নাগটিকে তো আমি ভালবাসি । তাহলে তো ভালই হয়েছে হর , তুমি গর্তে থেকে নাগটিকে বিয়ে করবো , বিয়ে করবো বলে চিৎকার করতে থাকলেই হবে । তখন জমিদার সাহেব তোমাকে গর্ত থেকে তুলে নিয়ে নাগটির সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে । হ‍্যাঁ । সাল বন্ধু আমার । তুমি ঠিক বলেছো । এসো তোমাকে গর্ত থেকে তুলছি । এবার তুমি গর্তে থাকো , হর বন্ধু । আর যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো কিন্তু ভুলে যেওনা । কিছুতেই ভুলব না , সাল । আসি , হর । বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হবে । ওহ জমিদারের প্রহরীরা আসছে এক্ষুনি শুরু করি আসল কাজটা । আমি নাগটিকে ভালবাসি । নাগটিকে বিয়ে করবো, নাগটিকে বিয়ে করতে চায় । বস , এ মিথ্যেবাদী কি বলে শুনেছেন ? হ‍্যাঁ । ভালোই শুনতে পাচ্ছি । সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজে আমরা জমিদার সাহেবের একমাত্র কন্যা নাগটিকে কোথাও খুঁজে পায়নি । আর সেই নাকি নাগটিকে বিয়ে করবে। বফাং! আদেশ করুন , বস । ঐ গর্তে ভালো করে মাটি চাপা দিয়ে এসো ? যাও ? যথা আজ্ঞা , বস। কাজ শেষ , বস । হারামজাদা, এবার মাটির নিচে বিয়ে করো । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন