বর্ষার ঋতুতে পথ - ঘাট পিছলা , খাল - বিল প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। সূর্য উঠিবার খবর নেই । গগণের চারিদিকে কালি মাখা মেঘ । কোথাও বৃষ্টি আবার কোথাও বৃষ্টি নেই। সাম্পান ওয়ালা মাঝি গানে মেতে নৌকা বাইচ করে আর সাম্পারি সেই তালে নৃত্য পরিবেশন করে। পথে হাঁটু পর্যন্ত পানি থাকায় ছল ছল শব্দ হচ্ছে - যেন কেউ হেঁটে আসছে । পিছনে তাকিয়ে দেখি ; সে কেউ নয় আমাদের লম্বাছড়া স্কুলের মেধাবী ছাত্রী উর্বি ।
উর্বি : নখা , এই শোন! কখন থেকে তোমাকে ডাকছি শুনতে পাওনা! ভিজে যাচ্ছি। পার হতে একটু সাহায্য তো করবে কি?
নখা : ( তাড়াহুড়ো করে বই - খাতা উর্বির কাছ থেকে নিয়ে তাঁর হাত ধরে কূলে পার করালো) বন্যায় প্লাবিত রাস্তা - ঘাট যেভাবে পানি ছল মল করতেছে এতে কি কারোর ডাক শোনা যায়! এইতো এসেছি । এসো!
উর্বি : (পানির উপর বিরক্ত হয়ে) উহঃ! বর্ষাকালে চলাচল করতে কত যে কষ্টকর ; বর্ষা বিদায় জানালেই যেন খুব ভালো হতো । ধন্যবাদ । চলুন এবার ।
নখা : আচ্ছা তোমার আজকে স্কুলে আসতে এতো দেরি হলো কেন? উর্বি।
উর্বি: আর বলিও না । সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ভেবেছিলাম আজ স্কুলে ( অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে) যাব না।
কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আজ পরীক্ষার রুটিন দেবে । ভাবলাম ঘরে বসে না থেকে বিদ্যাপীঠে যায় ।
নখা : তাই ! আচ্ছা তোমার বান্ধবী খুমতি আজ স্কুলে আসেনি? তাকে দেখতে পাচ্ছি না যে!
উর্বি : জানি না । আসতে পারে!
নখা : ওহ আচ্ছা! হ্যালো ! খাকচাং।
খাকচাং : আরে ! নখা , উর্বি তোমরা কতক্ষণ হলো এসে?
উর্বি : এইতো এক্ষুণি আসছি ।
খাকচাং : তোমাদের না দারুন মানিয়েছে!
উর্বি : মানে?
খাকচাং : বলছিলাম কি ! স্কুলের ড্রেসে তোমাদের খুব মানিয়েছে ।
উর্বি : পেকে গেছ তাই না! তোমারি ঐ কথার মাঝে না কিসের যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি ।
খাকচাং হাহাহা) তাই ! গায়ে কিছু থাকলে তো সুভাষ পাবেই । ( সকলে হাহাহা হেসে উঠলো)
নখা : তোদের রোমিও জুলিয়েটের লেকচার বন্ধ করো । এবার ক্লাসে যেতে পারি।
উর্বি : হ্যাঁ । চলুন ।
খুমতি : এই দাড়াও ! আমাকে মাঠে রেখে তোরাই ক্লাস করবি ।
নখা : না রে ! আছো একসাথে যাবো । ( শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করাতেই ক্লাস শুরু হলো)
উর্বি : ( শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছে । এরই মধ্যে উর্বি মৃদু হাসি দিয়ে বার বার নখার দিকে তাকিয়ে থাকে ) একটি কলম দিবে ? নখা।
নখা : অবশ্যই । ( কলমটা দিল) এই নিন।
উর্বি : ধন্যবাদ । (মনে মনে বলে) ওই খাকচাং বেতা আমার পানে বার বার আড় চোখে তাকায় কেন? ( ইতোমধ্যে টিফিন ঘন্টা বাজিয়ে উঠল)
উর্বি : নখা ! চলো ঝালমুড়ি খায়?
খাকচাং : আমরা দুজন ( খুমতিসহ ) খাবো না? শুধু তোমরা দুজনেই একসাথে খাবে?
উর্বি : ( হাহাহা) অবশ্যই । তোমরাও খাবে। ( উর্বি নখার হাত ধরে চলতে লাগল আর খাকচাং , খুমতিও গেলো । ঝালমুড়ি খাওয়া শেষে তিনজনকে বসিয়ে নখা ওয়াশ রুমে চলে গেল )
খাকচাং : ইয়ে মানে আসলে বলছিলাম কি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? উর্বি।
উর্বি : নিশ্চয়ই! বলো ।
খাকচাং: ( মাথা নিচু করে) ক্লাস চলাকালীন সময়ে তুমি আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলে কেন?
উর্বি : ( হাহাহা ) আমি! আমি আবার কখন তোমার দিকে তাকালাম?
খাকচাং : আমি দেখেছি তো!
উর্বি : ( হেসে) আমি তো নখার দিকে তাকাচ্ছিলাম । আমার কলমের কালি শেষ হয়েছিল তার কাছে কলম চাইবো নাকি চাইবো না ভাবছিলাম । আর তুমি ভেবে নিলে আমার নাগর খাকচাংয়ের দিকে পলকে তাকিয়ে আছি ( হাহাহা) ।
খুমতি : ( হেঁসে) তোমাদের দুজনকেই দেখি ক্লাসেও চোখ মারতে মিস করনা ।
নখা : (ওয়াশ রুম থেকে ফিরল ) এতো কিসের রসে জমেছে রে !
খুমতি : কি আর রসের আসর অনুষ্ঠিত হবে ! ক্লাসে ( উর্বি আর খাকচাং) এদের রোমান্টিক গল্প নিয়ে আড্ডা চলতেছে আর কি।
খাকচাং : ইয়ে মানে আসলে বলছিলাম কি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? উর্বি।
উর্বি : নিশ্চয়ই! বলো ।
খাকচাং: ( মাথা নিচু করে) ক্লাস চলাকালীন সময়ে তুমি আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলে কেন?
উর্বি : ( হাহাহা ) আমি! আমি আবার কখন তোমার দিকে তাকালাম?
নখা : ওহ আচ্ছা ।
উর্বি: টিফিনের সময় শেষ হয়েছে চলো এবার ক্লাসে যায়।
খুমতি : হ্যাঁ । চলো যাই ।
উর্বি: নখা । কখন থেকে ভিড়ের মাঝে তোমাকে খুঁজতেছি আর তোমার পাত্তায় নেই।
নখা: আমিও তো তোমাকে খুঁজছিলাম । দেখার মাত্রই তুমি কথা জিজ্ঞেস করলে । চলুন এবার ।
উর্বি: হ্যাঁ। কি খাবেন বলুন?
নখা: তুমি কি খাবে বলো?
উর্বি: থাক না ! আমি কিনে নিই?
নখা : ইম না থাক । আমি কিনবো। তুমি প্রতিদিন কিনে থাকো এখন আমি কিনি না ।
অব্রাহাম : হাহাহা দাদুভাই তোমাগো দাদি উর্বির মতো আমারে কোনোদিন কোনোবার কিছু কিনে খাবাইত তাইলে হেরে আমি ফাল দিয়া আকাশ থেইকা চাঁদটা পেরে এনে দিতাম ।
উর্বি: দেখেছিস ? নখা । দোকানদার দাদু কি বলে । এখন চট করে বলে দিন তোমার জন্য কি কিনবো ।
নখা: ঠিক আছে । কথায় তোমার সাথে কি পারা যায়! চিপস নে ।
উর্বি: হম । চুপিচুপি বলতে লাগলো এই দাদু না বুড়ো হয়েছে কিন্তু মনটা এখনো বুড়ো হয়নি ।
নখা: হাহা ! হ্যাঁ । ঠিক বলেছিস ।
উর্বি: এই বটগাছের নিচে একটু কিছুক্ষণ বসি না কি বলো ?
নখা: অবশ্যই । বসা যাবে ।
উর্বি: তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে ?
নখা : হ্যাঁ । আছে । স্কুলের সব বান্ধীরা না আমার গার্লফ্রেন্ড ।
উর্বি: দূর! হাদারাম।
নখা: কতক্ষন অপেক্ষা করেছিলেন না বললে জানতে পারবো কি করে? আর তুমি ওসব বলছো কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!
উর্বি : বুঝতে হবে না। সামনের মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে আমার আশীর্বাদ । তোমাকে আশীর্বাদ অনুষ্ঠানে থাকতে হবে কিন্তু ।
নখা: আশীর্বাদ! তুমিও আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করছো তাই না ।
উর্বি : না। সত্যি বলছি , নখা। আমার আশীর্বাদ অনুষ্ঠানে তোমাকে দেখতে চাই ।
নখা: কি ? তোমার আশীর্বাদ! তাও আবার আমার উপস্থিত চাও! তুমি একি করলে , উর্বি? তুমি আমাকে রেখে অন্যকে?
উর্বি: মানে? কি?
নখা: ইয়ে মানে , এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে না করলে কি হয়না? অপর্যাপ্ত বয়সে বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিল!
উর্বি: আমার আশীর্বাদ অনুষ্ঠানে আসবে না তো! ( হাত ধরে অনুরোধ করলো) এসো না!
নখা: ঠিক আছে, আসবো। ( কতো আশা ছিল আমার উর্বিকে নিয়ে , তা আর হলো না । সব বাতাসে উড়ে গেল । আমি যেন এতদিন বাতাসের পিছনে দৌড়েছি । কতো স্বপ্ন দেখতাম সে আমার বুকে এসে মাথা রেখে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি , নখা। তুমিই আমার স্বপ্নের ও বাস্তবের চির আপনা বর । আমার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল ।) এভাবেই হতাস জীবন কিছু দিন কাটতে লাগলো । ( একদিন বেথলেহেম চার্চে আরাধনা করতে যায়, নখা । কিন্তু ভাবতে পারেনি কুমারী মরিয়মের মিলবে দেখা ।)
জেলিনা: সুপ্রভাত! নখা। ( খ্রীষ্টে সকলে ভাই-ভাই । সেই হিসেবে অপরিচিত হলেও কাউকে কথা জিজ্ঞেস করা যায়।)
নখা: সুপ্রভাত! ইম্মানূয়েল ।
জেলিনা : ( হাসি মুখে) কেমন আছো? নখা ।
নখা : সদাপ্রভুর আশীর্বাদে মোটামুটি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন?
জেলিনা : আমাকে আপনি বলবেন না । তুমি করে বলো। আমিও হয়তো তোমার কাছের মানুষ হতে পারি । আমরাও পরিবারগত ভালোই আছি । কতদিন হলো তোমাকে চার্চে দেখতে পায়না । নিয়মিত আরাধনা ও নিরব ধ্যান করলে পবিত্র আত্মা আমাদের সঙ্গে থাকে । দূরে গেলে শয়তান গ্রাস করে । সুতরাং নিয়মিত উপাসনা করা আমাদের সকলের কর্তব্য ।য়
নখা: হ্যাঁ । ঠিক বলেছ । আসলেই পরীক্ষা নিয়ে আমি কিছু দিন ব্যস্ত ছিলাম ।
জেলিনা : নখা, একটা কথা বলি !
নখা : অবশ্যই ! বলো কি কথা!
জেলিনা : আমার তোমাকে ভীষন ভালো লাগে । আমি তোমাকে ভালবাসি । আর তোমার নম্রতা বিশ্লেষণ করে আমার পরিবারও তোমার প্রতি আকৃষ্ট । তুমিই আমার পরিবারের বাছাই করা বর ।
নখা : কি? ( অবাক হয়ে তাকিয়ে , যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়লো) কি বলছো তুমি? আমি কি করে তোমার পরিবারের বাছাই করা বর হলাম ?
জেলিনা : সেটাই সত্যি । ( মুচকি হেসে) পরে বলবো।
নখা: এক্ষুনি বলুন না ?
জেলিনা : অপেক্ষা করো । চলো ! উপাসনা শুরু হয়েছে ঈশ্বরের আরাধনা ও প্রার্থনা করি । আর তুমিও আমার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করো ।
নখা: হে প্রভু এ কি দেখলাম ও শুনলাম । এ তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পড়ার মতো । যাকে নিয়ে ভাবিনি ও স্বপ্ন দেখিনি অথচ সেই আজ আমাকে ভালবাসে ও তাঁর বর । ( আরাধনা করতে করতে মন - প্রাণ উজাড় করে পবিত্র মনে জীবন্ত পিতা খ্রীষ্টের নিকট প্রার্থনা করতে লাগলো । হে প্রভু এ কি তোমার ইচ্ছাতেই ছিল ? আমার বিশ্বাস পবিত্র আত্মার দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে জেলিনা ওসব কথা বলেছে। তোমার ইচ্ছাতেই যেন জেলিনার চাওয়া - পাওয়া পূর্ণ হয় । উপাসনা সমাপ্ত করে বাড়িতে এসে ভাবতে থাকে , কি অদ্ভুত কান্ড? আমি যাদেরকে প্রাণের চেয়ে ভালবাসতাম তাদের মুখে কখনো ও কোনো দিন ভালবাসি শব্দটা শুনিনি । অপরিচিত বটেই জেলিনা , শুধু চার্চের দেখা হতো প্রতি শুক্রবারে । আর সেই আমাকে বললো , "আমি তোমাকে ভালবাসি!" কতো মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছি কখনো ও কোনোবার সম্মুখে মাথা উঁচু করে তোমাকে ভালবাসি বলনি তাঁরা । আর জেলিনা চট করে বলে ফেললো হৃদয় শিহরণের কথা ।)
দেখতে দেখতে দুই বৎসর অতিবাহিত হলো আজও খুঁজে পায়নি আমি তোমাকে ভালবাসি ও পরিবারের বাছাই করা বর" সেই দুটো কথার কারণ । আজও জানতে পারলাম না আমি কেন তোমার বর ।